সারা দেশের ৪১টি ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে ঝুলছে প্রায় ৩ লাখ মামলা। এক–একটি মামলা শুনানির তারিখ ধার্য করতে হচ্ছে ছয় মাস থেকে এক বছর পরপর। এতে মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে। ফলে বাড়ছে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ।
ভুক্তভুগিদের একজন রুহুল আমিন। রাজধানীর কুড়িল এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিন সরকারি চাকরিজীবী। তিনি ২০০৯ সালে ঢাকার ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। ১০ বছর ধরে চলা এই মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
এ বিষয়ে রুহুল আমিন বলেন, তাঁর পৈতৃক জমি অন্যের নামে রেকর্ড হয়ে গেছে। মামলা এখন সাক্ষী পর্যায়ে। তিনি বলেন, ‘১০ বছর ধরে দৌড়াদৌড়ি করছি, ভোগান্তির শেষ নেই। মামলা থাকায় জমি নিয়ে কিছু করাও যাচ্ছে না।’
আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সারা দেশের ৪১টি ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে মামলা আছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৭০২টি। একটি জেলায় সর্বোচ্চ একটি ট্রাইব্যুনাল আছে। ফলে জেলাভিত্তিক মামলার সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ হাজার করে। এক–একটি মামলা শুনানির তারিখ ধার্য করতে হচ্ছে ছয় মাস থেকে এক বছর পরপর। এতে মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে। বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগও বাড়ছে। সম্প্রতি আইন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে এই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখন একজন যুগ্ম জেলা জজ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ পরিচালনা করেন। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হওয়ায় নির্দিষ্ট বিচারক ছাড়া অন্য কেউ মামলা পরিচালনা করতে পারেন না। এতে মামলাজট ও দুর্ভোগ বাড়ছে।
এই দুর্ভোগ লাঘবে সরকার আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় সংসদের আগামী শীতকালীন অধিবেশনে আইনের এ–সংক্রান্ত সংশোধনী পাস হতে পারে।
ভূমি জরিপ রেকর্ডে ভুলত্রুটি হলে জমির মালিক প্রতিকার পেতে এই ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারেন। ভূমি জরিপের গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এক বছর পর্যন্ত সময়ে এই মামলা করা যায়। উপযুক্ত কারণ দর্শানো সাপেক্ষে অতিরিক্ত আরও এক বছর সময় নিতে পারেন জমির মালিকেরা।
আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে বিএনপি–জামায়াত জোট সরকার স্টেট একুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট সংশোধন করে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল ও ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান সংযোজন করে। সে সময় ১২টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ায়। এখন ট্রাইব্যুনাল ৪১টি। ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়লেও মামলাজট নিরসন হয়নি।
মামলাজট নিরসনে পদক্ষেপ নিতে ২০১৭ সালে আইন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছিল। তারা আগের মতো সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজদের বিচারিক আদালতে এই মামলা পরিচালনার এখতিয়ার দিয়ে বিধান সংশোধনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছিল। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট জেলা জজকেও আপিল আদালত হিসেবে ঘোষণা করার অনুরোধ ছিল।
প্রায় দেড় বছর পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভূমি মন্ত্রণালয় বিধানটি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে। আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ করছে। আইন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও সংশোধনীর বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য গত মাসে একটি উপকমিটি গঠন করে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, মামলাজট নিরসনের লক্ষ্যে আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে এই সংশোধনী আনা হবে। তবে তার আগেও সংশোধন হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, আইন সংশোধন করে সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজদেরও বিচারকাজ পরিচালনার এখতিয়ার দেওয়া হচ্ছে। সূত্র: প্রথম আলো