বছরজুড়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন আলোচিত রায় দিয়েছেন। নানান ব্যতিক্রমী রায় ও আদেশ ব্যতীত নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে ঘটেছে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা। বছরের শেষের দিকে খালেদার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে নজিরবিহীন হট্টগোল নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনায় দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এজলাস কক্ষে সিসি ক্যামেরার আওতায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বেঞ্চে বিচারকার্য শুরু হয়। এছাড়াও চলতি বছর হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয় ৯ জন অতিরিক্ত বিচারপতি। আইন-আদালতের আলোচিত এই তিন ঘটনা নিয়ে ‘ফিরে দেখা সুপ্রিম কোর্ট: প্রথম পর্ব’।
হাইকোর্টে অতিরিক্ত নয় বিচারপতি নিয়োগ
গত ২০ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান নয় জন। ২১ অক্টোবর শপথ গ্রহণের দিন থেকে পরবর্তী দুই বছর এ নয় অতিরিক্ত বিচারপতি দায়িত্ব পালন করবেন।
অতিরিক্ত নয় বিচারপতিকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এখন মোট বিচারপতির সংখ্যা ১০০ জন। প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি রয়েছেন সাতজন। এর আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ মে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ১৮ অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়।
এজলাসে নজিরবিহীন হট্টগোল
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানিকে কেন্দ্র করে গত ৫ ডিসেম্বর নজিরবিহীন হট্টগোল হয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি না হওয়ায় তা সেদিন আদালতে দাখিল করেনি রাষ্ট্রপক্ষ। সেজন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন শুনানি পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর শুনানির জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন জমা না দেয়ায় রাষ্ট্রপক্ষকে দোষারোপ করে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে হট্টগোল বাধান বিএনপির আইনজীবীরা। এ অবস্থায় এজলাস থেকে নেমে যান প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ। এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সব কিছুর সীমা থাকা উচিত। আপনারা এজলাস কক্ষে যে আচরণ করেছেন, তা নজিরবিহীন।’
পরে এ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বিএনপির আইনজীবীদের দোষারোপ করেন। বিএনপির আইনজীবীরা দোষারোপ করেন রাষ্ট্রপক্ষকে।
আপিল বিভাগের এজসাল কক্ষে সিসি ক্যামেরা
১০ ডিসেম্বর দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এজসাল কক্ষে ৮টি সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ১১ ডিসেম্বর দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এজলাস কক্ষে সিসি ক্যামেরার আওতায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ বিচার কার্য শুরু করেন।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত কক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মনে করেন, এজলাস কক্ষে যারা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করবে তাদের চিহ্নিত করতে এসব সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যাতে এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সহজ হয়।
খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ
খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার আশায় বিএনপির আইনজীবীরা মুখিয়ে ছিলেন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন আবেদনের শুনানির দিকে। এ নিয়ে ৫ ডিসেম্বরের ঘটনার পর ১২ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য হয়।
১২ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। পাশাপাশি পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেন, যদি আবেদনকারী (খালেদা জিয়া) প্রয়োজনীয় সম্মতি দেন, তাহলে মেডিকেল বোর্ড দ্রুত তার অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্টের (বায়োলজিক এজেন্ট) জন্য পদক্ষেপ নেবে, যা বোর্ড সুপারিশ করেছে।