1581415216.png

ট্রাইব্যুনাল নয়, মাদক মামলার বিচারে গঠন করা হবে বিশেষ আদালত

অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে এবং নতুনভাবে সৃষ্ট মাদকের আগ্রাসন রোধে ট্রাইব্যুনালের পরিবর্তে বিশেষ আদালত গঠন করে মাদক ব্যবসায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) আইন, ২০২০’ এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠকে সভাপতিত্বে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) শেখ মুজিবুর রহমান এ তথ্য জানান। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর করা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আইনে বলা হয়েছে- সরকার সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করবে এবং প্রত্যেক ট্রাইব্যুনালে অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে বিচারক নিয়োগ করবে। তবে কোনো জেলায় অতিরিক্ত জেজা জজ না থাকলে ওই জেলায় দায়রা জজ নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে ট্রাইব্যুনালে স্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনালের মামলা নিষ্পত্তির বিধান রাখা হয়েছে।

প্রশাসনিক কারণে অদ্যাবধি মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন বা জেলা বা দায়রা জজকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এই ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব। তিনি বলেন, এর ফলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অসংখ্য মাদক অপরাধ সংক্রান্ত মামলা হলেও তা বিচারের মাধ্যমে নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয়। ফলে মামলার সংখ্যা বাড়ছে। প্রকৃত আসামিকে সাজা দেওয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না।

আইনের ৫৫টি ধারার মধ্যে ২২টি ধারায় সংশোধন আনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংশোধন করা হলে এই আইনের অধীন মাদকদ্রব্য অপরাধগুলো অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে বিচার সম্পন্ন হবে। সংশ্লিষ্ট দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ তাদের এখতিয়ার সম্পন্ন এলাকার জন্য কেবল মাদকদ্রব্য অপরাধের বিচারের জন্য এক বা একাধিক আদালত নির্দিষ্ট করতে পারবেন। ফলে মাদক অপরাধের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। এখন বিশেষ আদালত গঠিত হবে। এতে বিচারপ্রাপ্তি আরও সহজ করবে।

‘দুই বছরের সাজা হলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিচার করবেন। যেখানে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট আছে সেখানে দায়রা জজ বিচার করবেন।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তরুণ কান্তি শিকদার বলেন, আগে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার করার কথা ছিল। কিন্তু প্রশাসনিক কারণে সেই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা সম্ভব হয়নি। এখন ১ লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি মামলা রয়েছে।

মাদকের জন্য এখতিয়ারসম্পন্ন বিশেষ আদালত গঠন করছি। যেখানে ৬ মাসের কারাদণ্ড আছে, মৃত্যুদণ্ডও আছে। যে আদালতের যতটুকু ক্ষমতা সে আদালত ততটুকু বিচার করবেন। ক্ষমতাটুকু জেলা জজের কাছে দিয়ে দিচ্ছি, তিনি তার প্রয়োজন অনুযায়ী আদালত গঠন করে দেবেন।

‘শুধু মাদকের জন্য জেলা ও দায়রা জজ কোর্টগুলোকে ডেডিকেটেড করে দেবেন। স্পেশাল এখতিয়ার সম্পন্ন স্পেশাল আলাদত, প্রত্যেক জেলা ও মহানগরে। ট্রাইব্যুনাল থেকে আমরা সরে আসছি।’

প্রশাসনিক জটিলতা কী- প্রশ্নে তরুণ কান্তি বলেন, ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য যে পরিমাণ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রয়োজন তার কিছুটা সঙ্কট ছিল।

তিনি বলেন, মূল উদ্দেশ্য ছিল মাদকের মামলাগুলোকে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে অপরাধীকে ধরা। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি ছয় মাসের জেল হবে সেটাও একজন জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বিচারে যাচ্ছেন। যেখানে হত্যা মামলার মতো মামলাগুলো হ্যাম্পারড হতে পারে। কারও ছয় মাসের জেল হলো, জরিমানা হলো, সঙ্গে সঙ্গে তার আপিলের অথরিটি হাইকোর্ট। পঞ্চগড় বা টেকনাফের আসামিকে জেল দিয়ে আপিল করতে তাকে ঢাকা আসতে হবে।

‘এসব প্রশাসনিক বিষয়গুলোকে বিবেচনায় এনে সরকার চিন্তা করেছে যদি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করা হয় তবে যে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিপক্ষে জজকোর্টে আপিল করতে পারছে। ভূমি ট্রাইব্যুনালে লাখ লাখ মামলা বিচারাধীন আছে। আমরা সেটাও মাথায় রেখেছি।’