করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে দেশবাসীকে সুরক্ষা দিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ৩১টি নির্দেশনা মেনে চলতে বলেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নির্দেশনাগুলো হলো:
১। করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।
২। লুকোচুরির দরকার নেই, করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
৩। পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী) সাধারণভাবে সবার পরার দরকার নেই। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের জন্য পিপিই নিশ্চিত করতে হবে। এ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পিপিই, মাস্কসহ সব ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত রাখা এবং বর্জ্য অপসারণের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
৪। কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় নিয়োজিত সব চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালকসহ সংশ্লিষ্ট সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৫। যারা বাড়িতে সঙ্গরোধে (হোম কোয়ারেন্টাইনে) বা আইসোলেশনে আছেন, তাদের প্রতি মানবিক আচারণ করতে হবে।
৬। নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ এ ক্ষেত্রে নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
৭। নদীবেষ্টিত জেলাসমূহে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮। অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখতে হবে।
৯। পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা। সারাদেশের সব সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।
১০। আইন-শৃঙ্খলার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। জাতীয় এ দুর্যোগে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগেরসহ সব সরকারি কর্মকর্তা যথাযথ ও সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন- এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
১১। ত্রাণ কাজে কোনো ধরনের দুর্নীতি সহ্য করা হবে না।
১২। দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক যেন অভুক্ত না থাকে। তাদের সাহায্য করতে হবে। খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অতিরিক্ত তালিকা তৈরি করতে হবে।
১৩। সোশ্যাল সেফটিনেট কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
১৪। অর্থনৈতিক কার্যক্রম যেন স্থবির না হয়, সে বিষয়ে যথাযথ নজর দিতে হবে।
১৫। খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে, বেশি ধরনের ফসল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার, করতে হবে। কোনো জমি যেন পতিত না থাকে।
১৬। সরবরাহ ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে। যাতে বাজার চালু থাকে।
১৭। সাধারণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
১৮। জনস্বার্থে বাংলা নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে, যাতে জনসমাগম না হয়। ঘরে বসে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নববর্ষ উদযাপন করতে হবে।
১৯। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সমাজের সব স্তরের জনগণকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রশাসন সবাইকে নিয়ে কাজ করবে।
২০। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
২১। জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ওয়ার্ড ভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন করে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করবেন।
২২। সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমন: কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা/ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, পথশিশু, বিধবা এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখাসহ ত্রাণ সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
২৩। প্রবীণ নাগরিক ও শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২৪। দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী (এসওডি) যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সব সরকারি কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
২৫। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন, সরবরাহ ও নিয়মিত বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া মনিটরিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
২৬। আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পণ্য কিনবেন না। খাদ্যশস্যসহ প্রয়োজনীয় সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
২৭। কৃষকরা নিয়মিত চাষাবাদ চালিয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে।
২৮। সব শিল্প মালিক, ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি পর্যায়ে নিজ নিজ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়ি-ঘর পরিষ্কার রাখবেন।
২৯। শিল্প মালিকরা শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে উৎপাদন অব্যাহত রাখবেন।
৩০। গণমাধ্যম কর্মীরা জনসচেতনতা সৃষ্টিতে যথাযথ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের গুজব ও অসত্য তথ্য যাতে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
৩১। গুজব রটানো বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে নানা গুজব রটানো হচ্ছে। গুজবে কান দেবেন না এবং গুজবে বিচলিত হবেন না।