আত্মহত্যা হচ্ছে কোন ব্যাক্তির দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাননাশের প্রক্রিয়া বিশেষ। মূলত ল্যাটিন ভাষা (Sui Sediur) থেকে Suicide শব্দের উৎপত্তি। Suicide এর বাংলা আবিধানিক অর্থ হচ্ছে আত্মহত্যা বা নিজেকে হত্যা করা। মনোবিজ্ঞান চিকিৎসকদের মতে আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে “মানসিক অবসাদগ্রস্থ” গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। বিশ্বের প্রায় সব দেশেয় আত্মহত্যার চেষ্টাকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তাছাড়া প্রত্যেক ধর্মমতে আত্মহত্যা বা নিজের উপর যেকোন ধরনের আত্মঘাতী হয়ে উঠাকে মহাপাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
আইন অনুসারে আত্মহত্যার ব্যাখ্যা-
বাংলাদেশের কোন আইনে আত্মহত্যার কোন সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। তবে পেনাল কোড ১৮৬১ তে বলা হয়েছে, “Whoever attempt to commit suicide and does any act towards the commission of such offence, shall be punished with simple imprisonment for a term which may extend to one year, or with fine, or with both” (Penal Code 1861, Section 309)
অর্থ্যাৎ এখানে আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে তার জন্য শাস্তির বর্ননা দেওয়া হয়েছে। কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা করলে বা আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে স্বীয় শরীরের উপর কোন ধরনের আঘাত করলে তাকে পেনাল কোড ৩০৯ ধারা অনুসারে ১ বছর কারাদন্ডে দন্ডিত করা হবে। এছাড়া পেনাল কোড ৩০৬ ধারায় প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে আত্মহত্যার সহায়তা বা প্ররোচনা করার শাস্তির কথা বলা হয়েছে। কেউ আত্মহত্যার প্ররোচনা দিলে সে ব্যাক্তি আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরন করলে, প্ররোচনাদানকারীর শাস্তি পেনাল কোড ৩০৬ ধারা মোতাবেক ১০ বছরের কারাদন্ড এবং জরিমানায় দন্ডিত করা হবে। তাছাড়া আত্মহত্যা চেষ্টাকারী যদি মৃত্যুবরণ না করে তাহলে প্ররোচনাদানকারীকে ১ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের প্রচলিত সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ এর ৩২ ধারা অনুযায়ী, আত্মহত্যাকারীর রেখে যাওয়া সুইসাইড নোট প্ররোচনাদানকারীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে গন্য করা হবে। তবে এক্ষেত্রে সুধুমাত্র সুইসাইড নোট এর উপর ভিত্তি করে কাউকে শাস্তি দওয়া যাবে না। সুইসাইড নোটের সমর্থনে আরো সাক্ষ্য প্রমান উপস্থাপন করতে হবে। যেমনঃ সুইসাইড নোট আদৌ আত্মহত্যাকারীর কি না।
প্রকৃতপক্ষে, নিজের উপর আত্মঘাতী হয়ে উঠা যেমন কঠিন অপরাধ ঠিক তেমনি প্রত্যেক ধর্মমতে জঘন্য পাপ। জীবন মানেই পরীক্ষা, জীবন মানেই যুদ্ধ মানুষ হিসেবে সবারই তা অনুধাবণ করা উচিত। যে আত্মঘাতী হয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় তার কাছে অপারের জীবন দর্শন হয়ে উঠতে পারে আরও বেশী দুর্বিসহ এবং যন্ত্রনাদায়ক। সুতরাং আত্মহত্যার পথ বেছে না নিয়ে সমস্যার সমাধান খুজে বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব তাই সমস্ত সমস্যার সমাধান মানুষের হাতেই। সুতরাং আত্মহত্যা কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়।
লেখক : অ্যাডভোকেট, জজ কোর্ট চট্টগ্রাম।